আমার মতে কাস্টমার সার্ভিস একটি ব্যবসাকে আকাশচুম্বী সফলতা এনে দিতে পারে।আবার ঠিক একইভাবে কাস্টমার সার্ভিস একটি সফল ব্যবসাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে।মার্কেটিং সেক্টরে যেহেতু আমি কাজ করি,এবং আমি পড়াশোনাও করেছি মার্কেটিং মেজর নিয়ে তাই আমার দশ বছরের কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি আমার স্টেটমেন্ট সমর্থন করার জন্য দুটো রিসেন্ট উদাহরণ দিতে দিচ্ছি এবং সেই সাথে আপনাদের অভিমতটা কমেন্ট বক্সে জানতে চাচ্ছি।
প্রথমেই সুন্দর শুভ এবং পজেটিভ উদাহরণটা দিতে চাই।প্রধান কার্যালয়ের ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ।এখন লাস্ট ডিটেলিং এর কাজ চলছে। তো এই অফিসের কাঠের কাজটা করার কথা ছিলো আমার পূর্বপরিচিত একজন কন্ট্রাক্টরের।কিন্তু তার স্ত্রীর অসুস্থতার কারনে তিনি কাজটা পেছাতে বলেন।যেটা আসলে পেছানো সম্ভব ছিলো না কারন আমরা একটা ডেডলাইনের মধ্যে ছিলাম।আর এই কারণে খুব রেন্ডমলি সাধারন একজন কাঠের মিস্ত্রিকে আমরা কাজ করার জন্য নির্বাচন করি। এবং তাকে দিয়ে অল্প কিছু কাজ করাতে চাই যাতে আমরা আমাদের অপারেশনটা চালাতে পারবো।এবং বাকীটা আমাদের পূর্বপরিচিত মিস্ত্রী ফিরলে করবেন এরকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।তো তিনি যখন কাজ শুরু করেন খুব ছোট্ট একটা কাজ তাকে দেওয়া হয়।সেই কাজটা করার সময় তার ডেডিকেশন,তার দক্ষতা সব থেকে বেশি তার ব্যাবহার আমাদের এওটাই ভালো লাগে যে আমরা আমাদের ডুপ্লেক্স অফিসের পুরো কাজটাই তাকে দিয়ে করাই।
যে ব্যবসাই করুন না কেন সেটা এমন ভাবে করুন যেন কাস্টমারের মনে ভালো স্মৃতি রেখে দিতে পারেন।তাহলে দেখবেন ওয়ার্ড অফ মাউথে আপনার কোটি টাকার প্রচারণা হয়ে যাবে। আর যদি কখনো ভুল হয় সুন্দর করে সরি বলে জিনিসটা কীভাবে দু–পক্ষ মিলে সমাধান করা যায় সেটা চেষ্টা করুন।
টিংকার জান্নাত মীম – ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
সে ১০০০০/১২০০০ টাকার একটা কাজের কন্টাক্ট নিয়ে ঢুকেছিলো। প্রজেক্ট শেষ কোরে বের হয়ে যাওয়ার সময় প্রথম দফায় তার বিল ছিলো প্রায় আড়াই লাখের কাছাকাছি।অপেক্ষা করুন গল্পটা এখানেই শেষ হয়নি,বরং গল্পের শুরু এখান থেকেই হয়েছে।যাই হোক ভালো লাগা থেকে পরিচিতদের তাকে নিয়ে মৌখিক রিকমন্ডেশন দেওয়া হয়।তার ভাষ্য মতে তার পুরো জীবনে সব থেকে বেশি কাজ এই কতদিনে করেছে।এতো বেশি কন্ট্রাক্ট পেয়েছেন তিনি যে তিনি এখন মিস্ত্রি হিসেবে নন কন্ট্রাকটর হিসেবে কাজ করেন।তার ভাষ্যমতে আমি ছিলাম একজন মিস্ত্রী।আমি আমার ছেলেকে নিয়ে সর্বোচ্চ আমার শালাকে নিয়ে কাজ করতাম। এখন আমি হয়ে গেছি একজন কন্ট্রাক্টার।এখন আমি কাজ নেই।যতক্ষানি সম্ভব আমি নিজের টিম নিয়ে কাজ করি।আবার মিস্ত্রি হায়ার করে কাজ করি।এবং আমার কমিশন আমি রাখি।মানে ফুল ফ্রমে কন্টাক্টর আমরা যাকে বলি।তো যা বলছিলাম এই পুরো বিষয়টা হয়েছে সৃষ্টিকর্তা আমাদের মহান আল্লাহতায়ালার রহমতে এবং তার ব্যবহারের কারনে।
প্রথমে ভাল উদাহরণটা দিলাম।একটা ব্যবসার কতখানি পরিবর্তন হতে পারে শুধু ব্যবহারের কারনে।এখন একটা উদাহরণ দিব শুধু ব্যবহারের কারনে বা কমিটমেন্ট বা কথা ঠিক না থাকার ভালো এবং পটেনশিয়াল কাস্টমাররা কীভাবে হারাতে থাকে।শুধু তাই নয় খারাপ ব্যবহারের কারণে ইন দি লং টার্ম ব্যবসায় কীভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারেন সেটা বোঝানোর চেষ্টা করব। আমাদের কাঠের সমস্ত কাজ প্রথমে উল্লেখ করা কাঠ মিস্ত্রী করেন।শুধু একটা সোফা বেড আমরা আগেই অর্ডার করে রেখেছিলাম ৩১ অক্টোবর BPS.Furniture বিপিএস ফার্নিচারে।যাই হোক তারা একবার রিপ্লাই করলে আরেকবার করে না।আরেকবার রিপ্লাই করলে আরেকবার করে না।অনলাইনে কাস্টমার সার্ভিস খারাপ দেখে আমরা শো রুম ভিজিট করি।এবং তারা জানায় যে তারা ব্যস্ততার কারনে কমিউনিকেট পারেনা প্রোপারলি।যাই হোক তারা একবার বলে ৩০% এডভান্স দিলে কাজ করবে।আবার এডভান্স করারা সময় বলে ৫০% এডভান্স না হলে হবে না।তারপরেও কিভাবে জানি অর্ডারটা করা হয়ে যায়।আর ভুলটা ওই জায়গায় ছিল। আসলে এবং ভিবিন্ন কমিউনিকেশন গেপ, রেস্পন্স না করা, ম্যাসেজের রিপ্লাই না দেয়া, কল না ধরা। তো যাই হোক আমাদের সময় কম, তো আমরা অর্ডার করি।ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল নভেম্বরের আট তারিখে।ডেলিভারি একদিন আগে আমাদের তরফ থেকে কল করা হয় জানার জন্য যে হরতালে ডেলিভারি কখন করবে?তখন সে জানায় তার ওয়ার্কার ভুল বানিয়েছে, ১৫ তারিখের আগে সে দিতে পারবে না।কোন সরি না,আক্ষেপ না, জাস্ট একটা লাইন মেসেজ লিখে দেয়।ফোন তো সেই শুরু থেকেই ধরতো না, দয়া করে মেসেজের রিপ্লাই দিত বহুবার নক করার পর। যাইহোক যেহেতু অর্ডারটা দেওয়া হয়ে গেছে দাঁতে দাঁত চেপে অপেক্ষা করতে থাকি।গতকাল যখন তাকে কল করা হয় হরতালের ভেতরে ডেলিভারির ফোন কিভাবে হবে সেটা জানতে তখন সে বলে যে আমার আরো সময় লাগবে। তখন তাকে যখন বলা হয় আপনি নিজে ১৫ তারিখ ডেলিভারি করার কথা বলেছেন এখন কেন এমন বলছেন?তখন তিনি বলেন ১৫ তারিখের কথা বলিনি আরো পরে দেবো বলেছি।শুধু তাই নয় সে কোনরকম দুঃখ প্রকাশ না করে খুবই উদ্ধ্যত আচরন করে। তখন তাকে বলা হয় আচ্ছা টাকা ফেরত দিয়ে দেন।টাকা সে ফেরত দেয়, কিন্তু টাকা ফেরত দেয়াই তো সব কথা না।এতদিন টাকাটা রেখে সময় মত জিনিসটা ডেলিভারী না করা কতখানি খারাপ অভিজ্ঞতা একজন কাস্টমারের মনে এনে দিতে পারে সেটা বলার বাইরে।অফিসে যারাই এসেছে তারা জিজ্ঞাসা করেছেন কি ব্যাপার এই স্পেস্টা খালি কেন?তখন তাদেরকে বলেছি এখানে সোফা কাম বেড অর্ডার দিয়েছি সেটার জন্য অপেক্ষা করছি।তখন তারাও শুনে বলেছে ভালো হইলে বইলো আমিও একটা অর্ডার দিবো নে।এরকম করে ৫/৭ জনকে বলেছিলাম জানাবো।যদি তার সার্ভিস ভালো হতো তার সম্পর্কে একটা ভালো ধারনা হতো এবং ভবিষ্যতেও অর্ডার দেয়ার চান্স ও থাকতো। শুধু তাই নয় সবাইকে রেকমন্ড ও করা যেত। এই কয়েকদিন পরে আমার খুব নিকট আত্মীয় তার নতুন বাসায় ওঠবে। যেখানে তার ফুল ফার্নিচার লাগবে।যেটা আমি জানি আমাকেই কিনতে হবে। আর যদি বিপিস ফার্নিচারের কাস্টমার সার্ভিস,বিহেভিয়ার ভালো হতো এই বিরাট অর্ডার কি সে পেত না?এরকম বাজে একটি অভিজ্ঞতা না দিয়ে পারতো কিন্তু লং টার্ম একটা সম্পর্ক সম্পর্কের তৈরি করতে।জানিনা এরকম সার্ভিস দিয়ে লং তার টার্ম কতটুকু ব্যবসা করতে পারবে আমি জানি।এই দুটি অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার কারন হলো আপনাদেরকে কাস্টমার সার্ভিসের গুরুত্ব সম্পর্কে একটা রিয়েল লাইফ ধারণা দেওয়া।
যে ব্যবসাই করুন না কেন সেটা এমন ভাবে করুন যেন কাস্টমারের মনে ভালো স্মৃতি রেখে দিতে পারেন।তাহলে দেখবেন ওয়ার্ড অফ মাউথে আপনার কোটি টাকার প্রচারণা হয়ে যাবে। আর যদি কখনো ভুল হয় সুন্দর করে সরি বলে জিনিসটা কীভাবে দু–পক্ষ মিলে সমাধান করা যায় সেটা চেষ্টা করুন।কিন্তু সেটা না করে অপর পক্ষের কি-পরিমান ক্ষতি হতে পারে এটা না বুঝে যদি খারাপ ব্যাবহার করেন তাতে আসলে ইন দি লং টার্ম ফলাফল খুব খারাপ হতে পারে আপনার ব্যবসার জন্য।যাই হোক পরিশেষে এটাই বলতে চাই কাস্টমারকে ভালো অভিজ্ঞতা দেয়ার চেষ্টা করুন এতে কাস্টমারও উপকৃত হবেন, আপনারা ও ভালো থাকবেন।